প্রকাশিত: ১৮/০৬/২০১৭ ৮:১৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:০৭ পিএম

সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া নিউজ ডটকম::
সীমান্ত সংলগ্ন উপজেলা শহর উখিয়া এখন চোরাচালানীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। চিহ্নিত চোরাচালানী ছাড়াও রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে মৌসুমী পাচারকারীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে মরিচ্যা, বালুখালী, পালংখালী, ঘুমধুম বিজিবির সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে কিছু কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী উদ্ধার করলেও পাচারকারীদের সনাক্ত বা আটক করতে ব্যর্থ হওয়ায় চোরাচালানীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের জিরো পয়েন্টে মাত্র তিন কিলোমিটার ব্যবধানে অবস্থিত এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র উখিয়া সদরে নামকরা প্রায় ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সীমান্তের বিজিবির চোঁখ ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে। পাচারজাত পণ্যের তালিকা রয়েছে,চিনি, পেয়াছ,ভোজ্য ও জ্বালানি তেল,সেমাই, চিনি, চাল, ডাল থেকে শুরু করে যাবতীয় পণ্য সামগ্রী। বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা ও বোতলজাত মাদকদ্রব্য। রেজু আমতলী সীমান্তে বসবাসরত প্রতক্ষ্যদর্শী নুর আহাম্মদ (৩৫), শফি আলম (২৮) সহ একাধিক লোকজন জানান, প্রতি সন্ধ্যায় শতাধিক শ্রমিকের ৩/৪টি বহর কন্টেইনার ও বস্তাবর্তী জ্বালানী ও ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাচারের উদ্দেশ্যে সীমান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এসব শ্রমিকেরা ফেরত আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে মাদকদ্রব্য। এখাতে মাসোহারা পাচ্ছে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীর কয়েকটি সিন্ডিকেট সহ পুলিশের কতিপয় সদস্য। সীমান্তের কাছাকাছি পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা শাহাদৎ হোসেন জুয়েল সহ একাধিক লোকজন জানান, বছরের ১২ মাস নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার লিটার ভোজ্য তেল সরবরাহ এনে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। যার ফলে এখানে চোরাচালান ওপেন সিত্রেুটই বলা চলে।

সীমান্তের ডেইল পাড়া, আমতলী, করইবনিয়া, তুমব্রু, ঘুমধুম, বালুখালী, রহমতের বিল, পালংখালী ও ধামনখালী এলাকা চোরাচালানীদের টার্গেট পয়েন্ট হিসেবে পরিণত হয়েছে বলে এলাকার প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন। মিয়ানমারে দেশীয় পণ্য সামগ্রী পাচারের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজ সওদাগর, প্রদীপ সেন, বেট্টা বাবু ও বিশ্বজিৎ ষ্টোরের মালিক তপন বিশ্বাস জানান, খুচরা ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী মালামালা বিক্রি করা হচ্ছে। তারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের জানান কথা না। বালুখালী বিজিবির সুবেদার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাচার হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, খুচরা বিক্রি বা পরিবারের চাহিদার অজুহাত দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যাওয়ার কারণে আটক বা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। তথাপিও বিপুল পরিমান পণ্য সামগ্রী উদ্ধার হয়ে যাওয়া কথা সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবি স্বীকার করেছে।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা বিজিবির সুবেদার নজরুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, উখিয়া-টেকনাফের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি পত্র দেখিয়ে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার ব্যারেল জ্বালানি ও ভোজ্য তেল নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে চোরাচালান প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন জানান, ডিলাররা চাহিদার অতিরিক্ত ভোজ্যতৈল এনে থাকলে ব্যাবহা নেওয়া হবে। তাছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারে নিত্যপন্য পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত